জব্দ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উদ্ধারের প্রস্তুতি
- আপলোড সময় : ২২-০১-২০২৫ ০৪:৩২:৪৫ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২২-০১-২০২৫ ০৪:৩২:৪৫ অপরাহ্ন
১৫ হাজার কোটি টাকা উদ্ধারে আইনি প্রক্রিয়া শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট
সন্দেহজনক লেনদেন ও অর্থপাচারের মাধ্যমে জমা হওয়া ১৫ হাজার কোটি টাকা উদ্ধারে আইনি প্রক্রিয়া শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাড়ে ৩৫০টির বেশি অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে। এসব জব্দ করা অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর পাশাপাশি বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও রয়েছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগ এবং বিএফআইইউর নির্দেশে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বিএফআইইউ সূত্র জানায়, অর্থপাচার রোধ ও পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএফআইইউর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। প্রভাবশালী কোনো ব্যবসায়ী গ্রুপের বিরুদ্ধে পাচারের তথ্য প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেওয়া হবে না।
এই কর্মকর্তা ইঙ্গিত দেন যে, এই পদক্ষেপের ফলে দেশে ব্যবসায়ের মালিকানা পরিবর্তিত হতে পারে, পাচার হওয়া অর্থ প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে।
বিএফআইইউর সাবেক প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, তদন্ত চলাকালীন ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট সর্বোচ্চ সাত মাস সন্দেহজনক অ্যাকাউন্ট স্থগিত করতে পারে। যদি কোনো মামলা দায়ের করা হয়, তবে আদালত অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়িয়ে দিতে পারে।
আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার একটি জটিল প্রক্রিয়া, তবে সরকার-টু-সরকারের চুক্তি এটি সহজ করতে পারে। এচাড়াও বাংলাদেশ যদি আন্তর্জাতিক আদালতে প্রমাণ করতে পারে যে, ওই অর্থ অবৈধভাবে অর্জিত হয়েছে, তাহলে তা উদ্ধার করা কিছুটা সহজ হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরি আন্তর্জাতিক আর্থিক আইনের জটিলতা নিরসনে একটি শক্তিশালী আইনি দলের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত পেতে সরকারের দৃঢ় সংকল্প ও ধৈর্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী আইনি লড়াইয়ের দল দরকার।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, অর্থ পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে এ প্রথা অব্যাহত থাকবে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রথমে দেশের অভ্যন্তরে টাকা সরিয়ে নেওয় হয়, তারপর বিদেশে পাঠানো হয়। রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে এবং এটি প্রতিরোধে একটি কার্যকরী পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা প্রয়োজন।
সূত্র জানায়, স্থগিত করা অ্যাকাউন্টগুলোর বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেই অ্যাকাউন্টগুলো আইনগতভাবে মালিকদের মালিকানায় রয়েছে। মুস্তফা কে মুজেরি পরামর্শ দেন যে, বাজেয়াপ্ত তহবিলগুলো অভিযুক্তদের কর্মের দ্বারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিএফআইইউ এখন সিআইডি, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং কর গোয়েন্দাদের সঙ্গে প্রমাণ সংগ্রহ এবং আইনি মামলা পরিচালনার জন্য কাজ করছে। এই পদক্ষেপটি অর্থ পাচার মোকাবিলা এবং চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ